মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন

যুদ্ধদিনের পরশ পাথর

যুদ্ধদিনের পরশ পাথর

‘মা’ একটি শব্দ। মা মানেই স্নেহ-ভালবাসার অনন্য অনুভূতি আর মাতৃত্ববোধে ভরপুর একটি ডাক। আজ আমরা এই প্রবন্ধের কেন্দ্রীয় দৃশ্যপটে এমন একজন মা-কে হাজির-নাজির করব, যার ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শহীদ হয়ে যাওয়া সন্তানের প্রতি ভালবাসার দৃষ্টান্ত অবিস্মরণীয়। এই ‘মা’ হলেন সেই ‘মা’ ? যতদিন আমাদের লালসবুজের পতাকা থাকবে, যতদিন মুক্তির গান থাকবে, যতদিন এদেশের স্বাধীনতা অক্ষত থাকবে- ততদিন বিনম্র শ্রদ্ধায় উনার নাম লাখ-কোটিবার উচ্চারিত হবে। উনাকে স্বাধীনতার পর ঢাকা শহরের সকল জীবিত গেরিলা যোদ্ধারা ‘মা’ বলে শ্রদ্ধার সাথে সম্বোধন করতেন।
যারা একাত্তরে ক্র্যাক প্লার্টুন বলে খ্যাত, এই দলে ছিলেন- অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তনমন্ত্রী তোফাজ্জল হোসেন মায়া, বিশিষ্ট নাট্য নির্দেশক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, ঢাকার এক সময়ের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, প্রয়াত সাংসদ শহীদুল্লাহ খান বাদল, হাবিবুল বাশার, কাজী কামাল ওরা সহযোদ্ধা গেরিলা শহীদ আজাদের মা-সাফিয়া খাতুন-কে ওদের ‘মা’ বলে সম্বোধন করতেন। সেই ‘মা’ সাফিয়া খাতুন শহীদ সন্তানের কথা চিন্তা করে চৌদ্দ বছর ভাত খায়নি-খেয়েছে সারাদিনে একটা শুকনো রুটি আর শুয়েছে খাট পালকে নয়। শীত-গরম সারা বছরই ঘুমিয়েছে মেঝেতে।
৩০শে আগষ্ট’৭১-এ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আজাদ পাক হায়েনাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। আর ঠিক চৌদ্দ বছর পরে ৩০ শে আগষ্ট’১৯৮৫ সনে অর্থাৎ ১৪ বছর ঢাকার জুরাইন গোরস্তানে ঢাকার সকল গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা-সামরিক অভিবাদন জানিয়ে শ্রদ্ধা নত চিত্তে আজাদের ‘মা’ সাফিয়া খাতুনকে দাফন করেছে। আর উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছে আর উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে- কে এই মা!
এই প্রসঙ্গে কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক তার কালজয়ী উপন্যাস ‘মা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ১৯৭১ সালের ৩০ আগষ্ট একরাতে ঢাকার অনেক ক’টা মুক্তিযোদ্ধা-নিবাসে হামলা চালায় পাকিস্তানী সৈন্যরা, আরো অনেকের সঙ্গে ধরা পড়ে রুমী, বদি, আলতাফ মাহমুদ, জুয়েল এবং আজাদ। আজাদের ওপরে পাকিস্তানীরা প্রচন্ড অত্যাচার চালিয়েও কথা বের করতে পারে না। তখন তার মাকে বলা হয়, ছেলে যদি সবার নাম-ধাম ইত্যাদি বলে দেয়, তবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আজাদের মা ছেলের সঙ্গে দেখা করেন এবং বলেন, শক্ত হয়ে থেকো, কারো নাম বলে দিও না। আজাদ বলে মা দুদিন ভাত খাই না, ভাত নিয়ে এসো। মা পরের দিন ভাত নিয়ে হাজির হন বন্দিশিবিরে, কিন্তু ছেলের দেখা আর মেলে না। আর কোনোদিনও ছেলে তাঁর ফিরে আসে নাই আর এই মা আর কোনোদিনও জীবনে ভাত খান নি। যুদ্ধের ১৪ বছর পরে মা যখন মারা যান- নি:স্ব, রিক্ত-বেশে। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে কবরে শায়িত করলে আকাশ থেকে ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে বৃষ্টি।

 

শাফায়েত জামিল রাজীব
-সম্পাদক

একুশে টাইমস নিউজ মিডিয়া।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana